#Prostaglandin_এর_কুরবানী

#Prostaglandin_এর_কুরবানী 

 Prostaglandin এর  বাসায় গরুর সংখ্যা সব মিলিয়ে দুইটা। একটা লাল গাই, আরেকটা সাদা রঙের বলদ। তবে এই সহজ হিসাব তার  বাবা #Leukocyte  মানতে নারাজ। উনার ধারনা বাড়ীতে মোট তিনটে গরু। গাই আর বলদ ছাড়াও তিন নাম্বার গরু টা হলো স্বয়ং উনার একমাত্র ছেলে #Prostaglandin এবং আদতে এইটেই সবচাইতে বড় গরু।

 #Leukocyte সাহেবের বেশি রাগ হলে উনি ব্যাপারটা চিত্‍কার করে পাড়া পড়শীকেও জানানোর চেস্টা করেন। তবে এক্ষেত্রে  Prostaglandin এর  ধারনা তার নিজের কোন দোষ নেই। একটা মানুষ যে তিনবার ম্যাট্রিক ফেল করতেই পারে, এবং এটা যে নজরুল বা টমাস আলভা এডিসন টাইপের বড় বড় মহামানব হওয়ারই পূর্বলক্ষন; এই সহজ বিষয়টা সে এখন পর্যন্ত তার বাবাকে বুঝাতে পারলো না। তারপর যেদিন  বাবা রেগে মেগে ঘোষনা করলেন কাল থেকে বলদের জায়গায় # Prostaglandin কে লাঙলের সাথে বেধে হাল চাষ করা হবে সেদিন রাতে সে গভীর চিন্তায় নিমজ্জিত হলো। 

নাহ, সে আর এই সংসারে বেশিদিন থাকবে না। খুব দ্রুতই বিশাল বড় একটা কিছু হয়ে পুরো পৃথিবীকে চমকে দিবে। সে ফেসবুকে মহামানবদের যেসব লক্ষন পড়েছে;  স্কুল পালানো, পরীক্ষায় ফেল করা, বুদ্ধিমত্তা এবং ভবিষ্যত নিয়ে স্যারদের টিটকারী, ক্লাস থেকে বের করে দেয়া, এসব লক্ষন তো তার মধ্যে সুস্পস্ট। সে যাস্ট ডিসিশান নিতে পারতেছে না আইনস্টাইন হবে নাকি রবীন্দ্রনাথ?

 কোনটা বর্তমানে বেশি লাভজনক হবে,  যখন এই গুরুত্বপূর্ণ চিন্তায় গভীরভাবে মগ্ন, তখনই শুনতে পেল পাশের রুমে বাবা  ও মা ( mast cell)  নিজেদের মধ্য নিচুস্বরে কথা বলছেন।
সে কান পেতে তার মায়ের গলা শুনতে পেল,
'ঈদের তো আর বেশি দেরি নাই। কুরবানী দেওয়ার কথা কিছু ভাবছো?'
'হ, ভাবছি। বাবা বললেন, এবার আর হাট থেকে গরু কেনার ঝামেলায় যাবো না। ঠিক করছি নিজেদের একটা গরুই কুরবানী দিবো এবার।'

'ওহ, কোনটারে দিবা?'
 বাবা অনেক্ষন চুপ করে থেকে বললেন,
'কাজে তো লাগে না কোনো। ভাবতেছি বড় গরুটারেই কুরবানী দিয়ে দিবো।'
.
#prostaglandin এর  বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো। বড় গরু বলতে বাবা নিশ্চয় তাকেইই বুঝিয়েছেন। এখন কি হবে? ভয়ে তার সারা শরীর কাঁপতে লাগলো। তবে ভরসার কথা, এখনো কুরবানীর ঈদের কয়েকদিন বাকি আছে। তার আগে অবশ্যই কিছু একটা করতে হবে। টেনশানে তার সারারাত ঘুম হলো না। সকালে নাস্তার টেবিলে বসে সে বাসা থেকে পালিয়ে যাবে কিনা ভাবছিলো, এমন সময় তার মা খেকিয়ে উঠলেন, 'কি বসে বসে গরুর মতো জাবর কাটতেছিস! তাড়াতাড়ি সবগুলো ভাত খেয়ে আমাকে রেহাই দে।'

এরপরও কি আর কারো গলা দিয়ে ভাত নামে? নিশ্চয় কুরবানীর আগে তাকে খাইয়ে মোটাতাজা করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।  একপ্লেট ভাতের মধ্যেই  হাত ধুঁয়ে বাসা থেকে বের হয়ে পড়লো।
.
#Leukotrienes আর #Chemokines তার দুই বেস্ট ফ্রেন্ড। সে সব কাজেই এদের পরামর্শ নেয়। আজকেও সে দুই বন্ধুকে জরুরী ভিত্তিতে বাসা থেকে ডেকে এনে তার কুরবানী হওয়া সংক্রান্ত সবকিছু খুলে বললো। পুরো ব্যাপারটা শুনে দুঃখ পাওয়া তো দুরের কথা, তার দুই বেস্ট ফ্রেন্ড শুরু করলো হাহা হিহি হাসি। হাসতে হাসতে একজন আরেকজনের গায়ের উপর গড়িয়ে পড়তেছে। বন্ধুদের এহেন স্বার্থপরতায় তার প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হলো। রাগ করে বললো, 'আমার এখানে জীবন মরনের প্রশ্ন আর তোদের হাসি পাচ্ছে? ছিঃ ছিঃ তোরা তো আমার বন্ধু না, বন্ধু নামের কলংক!'

 Leukotrienes প্রথম নিজেকে সামলে নিলো। হাসি থামিয়ে বললো, 'রাগ করিস না দোস্ত, আমার আসলে তোর দুঃখে না নিজের সৌভাগ্যের কথা মনে করে হাসি পেল। আব্বায় কয় আমি একটা আস্ত গাধা। আর তুই তো জানিসই, আমাদের ধর্মে গাধা কুরবানী দেয়া জায়েজ নেই।'

'হ! পাশ থেকে  Chemokines বললো, আমিও একদম নিশ্চিন্ত। আব্বু বলে আমি নাকি রামছাগলের বাচ্চা। কিন্তু এইবার তো আমাদের গরু কুরবানী দিবে। আব্বু আর ভাইয়া গিয়ে গতকালই হাট থেকে বড় একটা গরু কিনে এনেছে। আসার সময় উঠানে বাধা দেখে আসলাম।'
.
বন্ধুদের এহেন সৌভাগ্যে Prostaglandin যারপরনাই ঈর্ষা অনুভব করলো। ইস! ওর বাবা যদি ওকে গন্ডার, ভাল্লুক অথবা নিদেনপক্ষে কুকুরও বলতো তাইলে আজকে সে বেঁচে যেত। এখন একটাই উপায় বাড়ী ছেড়ে পালানো। যেই ভাবা সেই কাজ! সে তখনই বড় রাস্তা ধরে সোজা পশ্চিম দিকে হাটা শুরু করলো।
.
হাটতে হাটতে একসময় রাত হয়ে গেল। ক্ষুধা তৃষ্ণায় ক্লান্ত হয়ে সে  একটা মসজিদের বারান্দায় আশ্রয় নিলো। পুরো মসজিদ ভর্তি লোকজন। ওয়াজ মাহফিল টাইপ কিছু একটা হচ্ছে। সাদা পান্জাবী পরা দাড়িওলা এক হুজুর কুরবানী নিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছেন। সে বারান্দা থেকেও হুজুরের গলার আওয়াজ স্পস্ট শুনতে পেল,

'বাজার থেকে বড় বড় গরু কিনে এনে মানুষকে দেখানের জন্য কুরবানী দেওয়া কুরবানীর প্রকৃত শিক্ষা নয়। কুরবানীর প্রকৃত শিক্ষা হলো ,নিজের সবচেয়ে ভালোবাসার, সবচেয়ে প্রিয় পশুটাকে কুরবানী করা।'
.
পুরো ব্যাপারটা শুনে  Prostaglandin হঠাৎ  করেই খুশি হয়ে উঠলো। আর যাই হোক, সে কোনভাবেই তার বাবার প্রিয় গরুর মধ্যে পড়ে না। তার থেকে বাবা ঐ বুড়ো সাদা বলদটাকেও বেশি ভালোবাসেন। তার মনে পড়লো একদিন গরুদুটোকে সময়মতো খাবার দিতে ভুলে যাওয়ায় বাবা তাকে কি মাইর টাই না দিয়েছিলো।
.
পরদিন ভোরে সে বাসায় ফিরে আসলো। বাড়িতে পা দিয়েই সে ভীষন অবাক! পুরো বাড়ী ভর্তি লোকজন। সে উচ্চস্বরে তার মায়ের কান্নার আওয়াজ শুনতে পেল। তাকে দেখামাত্র সবাই এগিয়ে আসলো।
'কাল সারারাত কই ছিলি তুই? সে অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো তার বাবার চোখের কোণে জল। আর আমরা এদিকে খুঁজে  খুঁজে হয়রান।'
'আহা এখন এসব থাক। দেখছো না ছেলেটার চোখমুখ শুকনো। আগে ওকে কিছু খেতে দাও। তার চাচা #Macrophage তাকে  বসিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। তারপর কোমল স্বরে বললেন, 'মা বাবা তো একটু বকা দিতেই পারে তাই বলে কি বাসা থেকে চলে যেতে আছে? বোকা ছেলে কোথাকার! যতই রাগ করুক আসলে তো তুই ই তোর বাবা-মা'র সবথেকে প্রিয়, সবচে' ভালোবাসার!
.
পরদিন সকালে #prostaglandin কে  আর কোথাও খুঁজে  পাওয়া গেল না! :p