epilepsy

epilepsy 

ছেলের নাম ইসমাইল।  বয়স ৮ বছর। বাবার নাম ইব্রাহিম।  মনে হচ্ছে নবীর বংশ। ইমার্জেন্সি তে ইসমাইল কে নিয়ে আসছে তার বাবা মা। ছেলের জ্ঞান নাই।  মুখ দিয়ে লালা ঝড়ছে।  বেডে শোয়ানো ইসমাইল কে জেনারেল এগজামিনেশন করে দেখলাম। সাড়া শরীর বোঝাই তাবিজ আর মাদুলি।  বুঝতে বাদ রইলো না, খিঁচুনি কমানোর জন্য তারা কম দ্বার ঘোরেন নাই।   তারপর তার মার সাথে কথা বললাম, কি হয়েছে জানার জন্য।

তার মা কান্না জড়িত কন্ঠে বলছে - "স্যার, আল্লাহ আমাগো ঘাড়ে এমন বিপদ ফালাইছে,  এই পোলার এক দিন পর পর এমন খিঁচনি হইয়া বেহুঁশ হইয়া যায়।  আজ সাড়া দিন খিঁচনি উঠছে ইক্টু পর পর। আল্লাহ ৫ মাইয়ার পর এক পোলা দিছে  ।  আর আমার এই পোলা নিয়া যেন মরন হইছে।  পারি না স্কুলে দিতে যদি রাস্তায় পইড়া মইরা থাকে।  কয় দিন পর পর হাসপাতালে আনতে আনতে আর পারি না। উপরওয়ালা তুইলা নিলেও বাঁইচা যাইতাম "।

ইমার্জেন্সি রুমের কোনায় ইসমাইল এর বাবা বসে বসে আছে।  সাড়া জামা কাপড় ভেঁজা।  খিঁচনির সময় ছেলের মাথায় দেয়ার জন্য কলসি ভরা পানি আনতে ভিজে গেছে।  ক্লান্ত শরীর যেন নুইয়ে পড়েছে এই ছেলেকে কোলে করে আনতে গিয়ে।

এইটুকু শুনতে শুনতেই আমার চোখের সামনেই আবার খিঁচনি শুরু হলো।  টিপিক্যাল এপিলেপ্সি (মৃগী)  এর খিঁচনি।  তাড়াতাড়ি পার রেক্টাল সেডিল দেয়া হলো।  বন্ধ হলো খিঁচনি। 

তারপর জিজ্ঞাসা করলাম - "ইসমাইল এর জন্য এলোপ্যাথিক কিছু মেডিসিন নিয়েছেন কিনা?"

তার মা বললো - "স্যার অল্প খেচলে বাড়িতে বইসাই গরুর দড়ি নাকে ধইরা রাখতাম।  আর আজকের মত অনেক হইলে হাসপাতালে নিয়ে আইতাম।  ডুস দিয়া ভাল হইলেই বাড়ি নিয়া যাইতাম"।

"খিঁচুনি যেন আর না হয়,  এর জন্য কোনো মেডিসিন নেন নাই?"। 

মাথা দুলিয়ে না করলো। 

তারপর আমি বাবা মা কে বুঝাতে বসলাম।  তাদের জানালাম এটা যে ব্রেইনের রোগ।  অথবা নির্মুল হওয়ার মত না ।  কিন্তু ঔষধ খেয়ে ভাল থাকার উপায়। 

আর বলে দিলাম " টার্গেট রাখবেন ঔষধ খাইয়ে ইসমাইল কে ৩ বছর টানা খিঁচুনি ছাড়া রাখতে,  যদি এটা পারেন,   তাহলে আর কখনো নাও হতে পারে আর এই খারাপ রোগ।"

চ্যালেঞ্জ হিসেবে বলে দিলাম - "৩ বছর তো বড় কথা   আপ্নি ৩ মাস মেডিসিন খাইয়ে দেখান।  পারলে মিস্টি খাওয়াবো। "

ইসমাইল এর বাবাও কথা দিলেন ঔষধ নিয়মিত খাওয়াবেন।  আমি ট্যাবলেট ভ্যালেক্স ২০০মিগ্রা (সোডিয়াম ভালপ্রয়েট) ট্যাবলেট সহ একটা প্রেস্ক্রিপশন বানিয়ে দিলাম। 

কাল সকালে বাসায় কেউ এক জন মিস্টির পোটলা নিয়া হাজির।  পরে দেখি এই সেই ইসমাইল এর বাপজান।  আমি তো অবাক।  মিস্টি তো আমার খাওয়ানোর কথা।  এরি মাঝে ৩ মাস চলে গেছে। 

তার ভাষাটা শুনুন -

" স্যার আফনে গো দোয়ায় আমার পুলার আর কিচনি উডে নাই।  ইসমাইলএর এহন সব ভাল ভাল হইয়া গেছে।  মাদুলি গুলা ফালাই দিছি।  আল্লাহ আমার পুলার দিকে ফিররা চাইছে আফনেগো উসিলায়।  আমার পুলা ভাল হইয়া গেছে এমুন মনে হয়"। 

সবশেষে বললো -

"স্যার, আমাগো ইসমাইল এবার ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হইছে "।

#চোখে জল ধরে রাখা দায়।  #আনন্দ।

:) :)