MD/MS
MD/MS
এমডি-এমএস পরীক্ষা নিয়ে একটু বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করেছি। কোন ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। প্রথমেই বলি পরীক্ষা হয় বছরে ২ বার। প্রথমে এপ্রিল মাসে যেটা হয় সেটা নন রেসিডেন্সি। এই একই সাথে ডিপ্লোমা এবং এমফিল পরীক্ষাও হয় একই প্রশ্নে। তবে এবার নন রেসিডেন্সি হবে কিনা এটা নিয়ে এখন নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। যদি নন রেসিডেন্সি তুলেও দেয় তবে ডিপ্লোমা ও এমফিল থাকবে। এ পরীক্ষাতে প্রশ্ন সংখ্যা ১০০ এবং সময় ১ ঘন্টা। নভেম্বরে হয় রেসিডেন্সি পরীক্ষা। এখানে সময় ৩ ঘন্টা এবং প্রশ্ন ২০০ টি। আপনার ইন্টার্ন শেষ হবার তারিখ থেকে কোর্স শুরুর তারিখ ১ বছর হলে আপনি এ পরীক্ষাতে অংশগ্রহণের জন্য বিবেচিত হবেন। পরীক্ষাতে সাধারণত ৩ সেট প্রশ্ন হয়। সেট “এ”তে মেডিসিন সেট “বি”তে সার্জারি এবং সেট “সি”তে বেসিক।এই ২০০ প্রশ্নের ভেতর প্রায় ১৭০ প্রশ্ন একই। বাকি প্রশ্ন মেডিসিনেঃ মেডিসিন স্কিন সাইকি পেডি আর কিছু বেসিক সার্জারি আর গাইনি সম্পর্কিত। আবার সার্জারির ক্ষেত্রেও বাকি প্রশ্ন সার্জারি অর্থো এনেস্থিসিয়া গাইনি আর কিছু বেসিক মেডিসিন স্কিন সাইকি পেডি সম্পর্কিত। সেই ক্ষেত্রে কেউ যদি পেডিয়াট্রিক্সে যেতে চান তাকে মেডিসিনের আর যদি কেউ এনেস্থিসিয়ায় যেতে চান তাকে সার্জারির প্রস্তুতি নিতে হবে।
আমি প্রধানত রেসিডেন্সি নিয়েই আলোচনা করব। কারণ রেসিডেন্সিই সবার প্রধান লক্ষ্য থাকে। রেসিডেন্সিতে আপনি শেখার সুযোগ বেশি পাবেন। পাসের হার বেশি। বেসরকারি শিক্ষার্থী হলে ১০০০০ করে টাকা পাবেন। ব্যাসিকের ক্ষেত্রে নন রেসিডেন্সি ৫ বছর কিন্তু শুধু প্যাথলজি ছাড়া অন্য বিষয়গুলো ৩ বছর। প্যাথলজি ৪ বছর। প্রতি বছর একটি সাবজেক্ট এ পরীক্ষা দেয়া যায় এবং ৩টা প্রতিষ্ঠান(বিষয় ভেদে পরিবর্তনীয়) চয়েস দেওয়া যায়।এখন দেখে নেই কোন কোন সেট এ কোন কোন বিষয় আছে। মেডিসিন হলো এ সেট যেখানে আছে কার্ডিওলজি , ডার্মাটোলজি, গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি, হেপাটলজি, এন্ডোক্রাইনোলজি, হেমাটলিজি, অনকোলজি, রেডিয়েশন অনকোলজি, মেডিকেল অনকোলজি, ইন্টার্নাল মেডিসিন, নিউনেটলজি, নেফ্রলজি, পেডিয়াট্রিক্স, পেডিয়াট্রিক গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি, পালমোনলজি, সাইকিয়াট্রি, ফিজিক্যাল মেডিসিন, রিউমাটোলজি, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন।
সার্জারি হলো সেট বি যেখানে আছে এনেস্থেশিওলজি, ক্রিটিকাল কেয়ার মেডিসিন, কার্ডিও থোরাসিক সার্জারি, জেনারেল সার্জারি, কম্যুনিটি অপথ্যালমোলজি, নিউরো সার্জারি, হেপাটোবিলিয়ারি সার্জারি, গাইনি ও অবস, অপথ্যালমোলজি, অর্থোপেডিক সার্জারি, অটোল্যারিঞ্জোলজি, রেডিওলজি এনড ইমেজিং, ইউরোলজি, পেডিয়াট্রিক সার্জারি, প্লাস্টিক সার্জারি, কার্ডিওথোরাসিক সার্জারি, সার্জিকাল অনকোলজি।
সেট সি হলো বেসিক যেখানে আছে এনাটমি, ফিজিওলজি, প্যাথোলজি, মাইক্রোবায়োলজি, ফার্মাকোলজি, ভাইরোলজি, ল্যাবরেটরি মেডিসিন, বায়োকেমিস্ট্রি। প্রতি প্রতিষ্ঠানে সাধারণত ৭টি করে সিট। ৩টি সরকারি পরীক্ষার্থী ৩ টি বেসরকারি পরীক্ষার্থীদের জন্য আর ১ টি BSMMU এর জন্য। আপনার চান্স পাওয়া নির্ভর করবে আপনার পছন্দের বিষয়ের অন্য পরীক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বরের উপর। আপনি হয়ত ৯০ পেয়েও চান্স পাননি আবার ৬০ পেয়েও কেউ চান্স পেয়ে গেল। তাই যাদের আগে চান্স পাওয়া দরকার এবং সাবজেক্ট নিয়ে মাথা ব্যথা নেই তাদের উচিত প্রস্তুতি অনুযায়ী সাবজেক্ট পছন্দ করা। আর সবার উচিত নিজের মেধা পছন্দ আর সামর্থ্য অনুযায়ী সাবজেক্ট পছন্দ করা। লেখার এ অংশটুকু সে সকল জুনিয়র,সহকর্মী বড় ভাই বোনদের জন্য যারা হয়তো কিভাবে পড়া শুরু করবেন, কতটুকু পড়বেন, কি কি পড়বেন এগুলো বুঝছেন না তাদের জন্য। সবার পড়ার ধরন আলাদা, সময় আলাদা। তাই এগুলো সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। আপনার ভালো না লাগলে অথবা আপনার প্রয়োজন মনে না করলে সহজেই এটাকে এড়িয়ে চলে যান। কারণ আপনি যদি সব কিছু পড়তে পারেন অথবা মেইন বই পড়তে পারেন তবে সেটা অবশ্যই ভালো হবে আমি যেটা বলছি তার চেয়ে। তবে কিছু ট্রিক্স আছে লেখার শেষে যেটা অনেক বড়ভাই, দিলিপ স্যার এবং আমার নিজের যেগুলো অবশ্যই আপনাদের কাজে লাগবে। পরীক্ষাতে ভাগ্য অনেক বড় প্রভাব ফেলে। তাই আবারও বলছি আমি যা বলছি এটাই ধ্রুব সত্য নয় বা এটুকু পড়লেই হয়ে যাবে এমন না কিন্তু আমার বিশ্বাস এগুলো পড়লেই অনেক কিছু করা সম্ভব এবং আপনার টার্গেটে আপনি পৌঁছাতে পারবেন সহজেই। প্রথমেই বলি কি কি বই পড়বেন। দিলিপ স্যারের নোট, ম্যাট্রিক্স গাইড, ইমপালস গাইড, জেনেসিসের ২০০ টপিক্স বই,আর ম্যাট্রিক্স বা জেনেসিসের শেষ ৫ বছরের একটি বই আছে সেটা। ম্যাট্রিক্স গাইড এর কথা এই জন্য বলেছি কারণ ম্যাট্রিক্স এ পূর্ববর্তী প্রশ্ন বেশী দেয়া। মনে রাখবেন এমডি-এমএস পরীক্ষায় প্রধানত পড়তে হবে ব্যাসিক। আপনি ব্যাসিক মেডিসিন সার্জারি যে বিষয়েই পরিক্ষা দেন না কেন বেসিকে আপনার ভালো হতেই হবে। এই কারণে প্রথমেই আপনি পড়বেন ফিজিওলজি। প্রথমে স্যারের নোটের স্টার আর ইনফিনিটি স্টার পড়বেন। একই সাথে পড়বেন ম্যাট্রিক্সের/ইমপালসের ঐ টপিক্সটি এবং এর সাথে রিলেটেড মেডিসিন এবং সার্জারি অংশটুকু। এখান থেকে আপনি যে অংশগুলো গুরুত্বপুর্ণ মনে করবেন সেটা স্যারের নোটের পাশে টুকে রাখবেন। এরপর পড়বেন ফার্মাকোলজি। এরপর প্যাথোলজি, মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিষ্ট্রি এবং এনাটমি। প্রশ্ন প্রচুর রিপিট হয় তাই প্রশ্ন ভালো করে পড়তে হবে এবং যে যে টপিক্স বারবার আসছে ঐগুলো ২০০ টপিক্স বই থেকে পড়তে হবে। সাইড সাবজেক্ট যেমন স্কিন বা অর্থো বা পেডি শুধুমাত্র ম্যাট্রিক্স/ইমপালস এ যেটুকু ঐটুকুই পড়তে হবে তবে তা অবশ্যই ব্যাখ্যাসহ। তবে যদি কোন টপিক্স দেখে মনে হয় বারবার প্রশ্ন আসছে তাহলে ঐ টপিক্সটা মেইন বই থেকে পড়ে নিতে হবে। ব্যাসিকের ক্ষেত্রে এমডি এমএস উভয় পরীক্ষাতে একই পরীক্ষায় যে যে প্রশ্ন কমন এসেছে সেগুলো পড়তে হবে। তবে বেসিক পরীক্ষাতে সার্জারি অপেক্ষা মেডিসিন থেকে প্রশ্ন বেশি থাকে।তাই বলে বেসিক কখনো ভুলে যাবেন না। পরীক্ষার আগে আগে গত ৫ বছরের প্রশ্নগুলো ভালো করে পড়ুন। সব চেয়ে বেশি কমন আসবে এগুলো থেকেই। ম্যাট্রিক্স এ অনেক ভুল আছে সত্যি কিন্তু ভুল আছে ভেবে যদি না পড়েন তাহলে হবে না। আপনি যখন পড়বেন তখন যেটা যেটা ভুল মনে হবে পেন্সিলে দিয়ে দাগ দিয়ে রাখুন বা টপিক্সটা খুঁজে ঠিক করে নিন। এতে করে পড়াটা অনেকদিন মনে থাকবে। মনে রাখবেন কিছু প্রশ্ন আছে যেখানে প্রশ্নটাই ভালো করে বোঝা যায় না অথবা উত্তর কি হবে এটা এক এক বইতে এক এক রকম আছে। সেগুলো নিয়ে বেশি সময় নষ্টের দরকার নেই। এবার বলি পরিক্ষার কিছু ট্রিক্স। মনে রাখবেন ব্যাসিক থেকে প্রশ্ন থাকবে ১৫০-১৬০। আর এটাই আপনার টার্গেট। কিছু প্রশ্ন থাকবে যা আপনার মাথার উপর থেকে যাবে যেগুলো নিয়ে আপনার ভয় পাবার কিছু নেই কারণ প্রশ্নগুলো মাক্সিমাম মানুষের মাথার উপর দিয়েই যাচ্ছে ধরে নেবেন। এই মাথার উপর থেকে যাওয়া প্রশ্নগুলো হয়তো পরপর থাকতে পারে। হয়তো দেখলেন পরপর ১০ টা প্রশ্ন এমন এলো। ভয় পাবার কিছুই নেই। কারণ সামনে আপনার পারা প্রশ্ন আপনার অপেক্ষাতে আছে। আপনি এখানে ভয় পেলে তাদের আর ধরতে পারবেন না। সময়ের দিকে খুব সাবধান থাকতে হবে। এজন্য ২৫ টি প্রশ্নের জন্য ২১ মিনিট ধরে পরীক্ষা দিয়ে যেতে হবে তাহলে সময়ের মধ্যে সব শেষ করা সম্ভব হবে। এবার বলি কিভাবে মাথার উপর থেকে যাওয়া প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবেন। হয়তো এমন হলো এই প্রশ্নটা যে সম্পর্কে তার কিছুই আপনি জানেন না। তো সময় নষ্ট করার কোন দরকার নেই। সব T বা F দাগিয়ে দিন। সময় বাঁচবে যেটা পরবর্তীতে কোন পারা প্রশ্নে আপনি ব্যয় করতে পারবেন। মনে করুন কোন প্রশ্নের ২টা T আপনি জানেন বাকিগুলো নিশ্চিত নন তাহলে চোখ বুজে বাকিগুলো F দাগিয়ে দিন। আবার দেখা গেলো ১টি T আপনি নিশ্চিত তাহলে বাকিগুলোF দাগান। একটি প্রশ্নে যে ৫টি অপশন থাকে তার ১ টি সঠিক আর ৪টি ভুল হলেও আপনার ঐ প্রশ্নে মার্ক আসবে ০। সুতরাং কোন প্রশ্ন ছেড়ে আসা যাবে না। আর মনে করুন আপনি কোন প্রশ্ন পড়েছিলেন কিন্তু এখন মনে নেই সঠিক ভাবে সেই ক্ষেত্রে আপনার যদি মনে হয় T এর সংখ্যা বেশি তো সেটার সবগুলো T দাগাবেন আবার যদি মনে হয় F এর সংখ্যা বেশি ত সবগুলো F দাগাবেন। কখনই মনে হবার উপর ভিত্তি করে কিছু T আবার কিছু F দাগানো উচিত নয়। এতে মার্কস কমে যায়। যাই হোক ধৈর্য্য ধরে এতো কিছু লিখতে পারলাম আপনাদের জন্য এই জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা। সবার জন্য শুভকামনা রইলো।লেখাটি প্ল্যাটফর্ম পত্রিকার চতুর্থ সংখ্যায় প্রকাশিত, এছাড়া এনেস্থেশিয়াতে ক্যারিয়ার সম্পর্কিত লেখা আছে চতুর্থ সংখ্যায় । প্রতি সংখ্যায় এ জাতীয় কয়েকটি লেখা থাকে ।
No comments