সার্জারি_সাবজেক্ট_চয়েস

#সার্জারি_সাবজেক্ট_চয়েস!

এম এস/এম ডি পরীক্ষা মূলত নির্ভর করে সাবজেক্ট চয়েস আর ইনস্টিটিউট চয়েসের উপর। আর আমরা সচারচর এটাই ভুল করি। আমি যেহেতু সার্জারি ফ্যাকাল্টিতে পরীক্ষা দিয়েছি তাই এই ফ্যাকাল্টি নিয়েই আমি বলবো.... আশা করি আপনারা উপকৃত হবেন।
পয়েন্ট করে বলবো যাতে পড়তে bore না লাগে...

১. নিউরো সার্জারি/অর্থোপেডিক্স/ইউরোলজীতে কম্পিটিশন বেশ! ১৫৫ এর মত স্কোর লাগে। মনে রাখবেন এসব সাবজেক্টে যারা পরীক্ষা দিবে তারা অনেক দিন ধরেই প্রিপারেশন নিচ্ছে শক্ত মন নিয়ে.... তাই প্রিপারেশন না থাকলে এসব সাবজেক্ট চয়েস রিস্কি বলা যায়!

২. প্লাস্টিক সার্জারিতে আজকাল বেশ নাম্বার উঠছে। ১৪৫ এর মত নাম্বার উঠছে আজকাল। ভবিষ্যত এর ডিমান্ডিং সাবজেক্ট এটি।

৩. ই.এন.টি তে ১৪৫ এর মত নাম্বার উঠবে। কখনো কখনো এর বেশিও উঠে।

৪. পেডি সার্জারি তে ১৪০-১৪২ উঠবে। তবে সিট আছে অনেক। সিট বেশি আছে দেখেই বেশির ভাগ মধ্যম ক্যাটাগরীর ছাত্র- ছাত্রীরা এটা টার্গেট করে! আর তখনই নাম্বার টা বেড়ে যায়।

৫. কার্ডিওথোরাসিক/অপথালমোলজি  তে ১৩২-১৩৫ উঠবে। মনে রাখা উচিত কার্ডিওথোরাসিক পড়লে ফিউচারে ঢাকা/ বিভাগীয় শহরেই আপনার কাজের সুযোগ মিলবে কেবল। কারণ অপারেশন করার জন্য স্পেশাল ওটি আপনি পেরিফেরীতে পাবেন না। আর অপথালমোলজি একটু বেরসিক সাবজেক্ট! চান্স শুধু পেলেই হবে না। এটা সারাজীবন টানতে পারবেন কিনা এটাও দেখতে হবে। এটা বুঝেই এই সাবজেক্টে পরীক্ষা দিবেন।

৬. তারপর আসি জেনারেল সার্জারির কথা। ১৩০-১৩২ এর মত নাম্বার লাগবে। আজকাল এই প্রিন্সিপাল সাবজেক্টের ভেল্যু কমে গিয়েছে। তারপরও পেরিফেরীতে কাজ করার জন্য সাবজেক্টটা খুবই ভাল। প্রচুর কেস পাবেন। বেশ টাকা ইনকাম করতে পারবেন! মানুষ সার্জন মানেই বুঝে জেনারেল সার্জন। এই ধ্যান ধারণা সহজে যাবে না। মনে রাখবেন যত কিছুই বলেন না কেন জেনারেল সার্জারি মাদার সাবজেক্ট! এই সাবজেক্টের ভেল্যু সত্যিকার অর্থে কখনো কমবে না....

৭. মনে রাখবেন এনেসথেসিয়া সাবজেক্টটার ডিগ্রীর নাম  MD. কিন্তু প্রশ্ন MS ফ্যাকাল্টির। নাম্বার ১৪৫ এর মত লাগে কারণ ডিপ্লোমার মত এই সাব্জেক্টের MD তে এতো  সিট নেই। তাই চান্স পাওয়া বেশ কঠিন। আর এই সাবজেক্টে পড়ে ICU তে ভাল জব তো পাবেনই সাথে সাথে বিভিন্ন হাসপাতালে এনেস্থেসিয়া দেয়ার সুযোগ আছে। এই সাব্জেক্ট টা হলো "চুপি চুপি বড়লোক" হওয়ার সাবজেক্ট!

৮. ক্রিটিকাল কেয়ার মেডিসিন। এই সাবজেক্টেরও ডিগ্রির নাম MD. কিন্তু প্রশ্ন MS এর। ভবিষ্যতের খুব দামী সাবজেক্ট এটি। এই সাবজেক্টে পড়ে আপনি বিভিন্ন ICU তে জব পাবেন। অদূর ভবিষ্যতে বিভিন্ন হাসপাতলে ICU খোলা হবে.... তাই চাকরির ক্ষেত্র অনেক বাড়বে!

৯. ভাস্কুলার সার্জারি/ কলোরেকটাল সার্জারিঃ ১৩২-১৩৫ এর মত নাম্বার উঠবে। এসব সাবজেক্টে আসলে নাম্বার predict করা যায় না। কারণ সিট কম। তাই কম্পিটিশনটাও ঠিক বুঝা যায় না। তবে সচারচর কম উঠে। মেয়েদের জন্য কলোরেক্টাল সার্জারি খুবই ভাল চয়েস হবে। রিস্ক কিন্তু নেয়াই যায়! জীবন তো একটাই!😜

১০. অবস এন্ড গাইনীকোলজীঃ মেয়েদের চিরাচরিত পছন্দের সাবজেক্ট। পরিবার থেকেও এই সাবজেক্টে ক্যারিয়ার করার জন্য চাপ থাকে।  ১৪৫-১৫০ এর মত স্কোর লাগে। ফিল্ড অনেক বেশি saturated! গাইনী পড়ে ঢাকায় সিজার করে বড়লোক হয়ে যাবেন এই চিন্তা এখন বাদ দিতে হবে। টাকা ইনকাম করতে হলে পেরিফেরিতে থাকতে হবে। মনে রাখবেন এখন সিজার করে ডাক্তাররা পায় ১৫০০-২০০০ টাকা। আপনি সিজার না করলে সিজার করার লোকের অভাব হবে না। ওয়ার্ড বয়ও সিজার করে আবার পিজিটি করা ডাক্তারও সিজার করে, সার্জনরাও সিজার করে! মানে হলো আপনার কেস খাওয়ার মানুষের অভাব হবে না!

১১. সার্জিকাল অনকোলজীঃ সিট বেশ কম। ১৩২-১৩৫ এর মত স্কোর লাগে। ফ্রাস্ট্রেটিং সাবজেক্ট বলা চলে। মানে patient's compliance ভাল না। দিন শেষে achievement is zero. ইনষ্টিটিউট ছাড়া রোগী পাওয়া কঠিন। তখন আবার পেটের তাগিদে জেনারেল সার্জারির কেস করতে হবে।

১২. হেপাটোবিলিয়ারী সার্জারিঃ ১৩৫ এর মত স্কোর লাগে। সিটের সংখ্যা খুব কম। ভবিষ্যৎ এর ভাল সাবজেক্ট। প্রচুর কেস আছে। কিন্তু জেনারেল সার্জারির জন্য সাবজেক্টটা suppressed. এটা ঠিক এই সাবজেক্টের ডাক্তাররাও জেনারেল সার্জারির কেস করেই বাঁচে!☺

১৩. এবার আসি কোন কোন সাবজেক্টে ইমারজেন্সি আছে! নিউরোসার্জারি, অর্থোপেডিক্স, বার্ন ও প্লাস্টিক, পেডি সার্জারি - এগুলোতে ইমারজেন্সি অনেক। মানে আপনার জীবন তেনা তেনা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক! ই. এন. টি, ইউরোলজী, কলোরেক্টাল ক্ষেত্র বিশেষে ইমারজেন্সি আছে। অপথালমোলজি তে ইমারজেন্সি নেই। মেয়েদের জন্য তাই এটি ভাল সাবজেক্ট!

১৪. ঢাকার বাইরে যেতে সমস্যা না থাকলে ৩য় অপশন টা  ঢাকার বাইরের কোনো ইনষ্টিটিউট দিবেন। এতে চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে ঢাকার বাইরের ইনষ্টিটিউট গুলোতে একাডেমিক পরিবেশ নেই তেমন তাই পাস করার হার অনেক কম! এটাও মাথায় রাখতে হবে।

১৫. আমি মেয়ে। সংসার আছে, স্বামী আছে, ঢাকায় সেটেল! ঢাকার বাইরের ইনষ্টিটিউট চয়েস দিব কিনা! তাহলে বলবো, না দেয়াই ভাল। সিট নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে দেয়ার দরকার নাই। পরের বার প্রিপারেশন নিয়ে বসেন। ঢাকাতেই আপনার সিট হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ!

মনে রাখবেন যেটা আপনার ভাগ্যে আছে দিন শেষে সেটাই আপনার ভাগ্যে থাকবে।  আপনি শুধু চেষ্টা করতে পারেন। আশাহত হওয়া যাবে না। সবাই পেরেছে আপনিও পারবেন! ইনশাআল্লাহ!

দিন শেষে সবার জন্য শুভ কামনা!