History_Behind_Diagnosis: 09

#History_Behind_Diagnosis: 09

ডাক্তার "ক" স্যার একজন শিশু বিশেষজ্ঞ, যিনি ঢাকার বাইরে একটি সরকারি হাসপাতালে কর্মরত।ডাক্তার "খ" স্যার আরেকজন শিশু বিশেষজ্ঞ যিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চেম্বার করেন এবং আরো সিনিয়র, ব্যাস্ত প্র্যাক্টিশনার। যা'ই হোক, ডাক্তার "ক" স্যার এর পরিবার ঢাকায় থাকেন।
এবং রিসেন্টলি ওনার ১ বছর ১০ মাসের একটি বাচ্চা অসুস্থ হয়ে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যায় হঠাৎ করে।তার কিছুদিন পর ডাক্তার "ক" স্যার তাঁর কর্মস্থলে ফিরে আসলেন এবং আমাকে ডেকে পুরো বিষয়টা শেয়ার করলেন।আমি পুরো বিষয়টা আপনাদের কাছে তুলে ধরছি।পুরো বিষয়/কনভারসেশন টা জানার পর আপনারা নিজেরাই বুঝতে পারবেন, আমি কিছু বলতে হবে না।
.
বুধবার সকালে বাচ্চার মা খেয়াল করলেন বাচ্চা ঘুম থেকে উঠতে চাচ্ছে না, শুধু ঘুমাচ্ছে। বাচ্চার বাবা তখন তাঁর কর্মস্থলে কর্মরত। ওভার ফোনে বাচ্চার বাবা কে জানানো হল, তখন তিনি কনফার্ম করতে বললেন যে: আগের রাতে বাচ্চা কে কোনো কাশের ঔষধ খাওয়ানো হয়েছে কিনা!  বাচ্চার মা কনফার্ম করলেন: কোনো ঔষধ খাওয়ানো হয় নি। তাই "বাচ্চা শুধু ঘুমায়" দেখে বাচ্চার বাবার [He is a Consultant(FCPS, Paediatrics)] মাথায় প্রাথমিকভাবে  চার টা জিনিস আসলো:
1. CNS cause
2. Hyponatremia
3. Hypoglycemia
4. Any other Metabolic causes
কিন্তু বাচ্চার যেহেতু সেরকম কোনো হিস্ট্রি নেই, তাই Hyponatremia হওয়ার চান্স নেই বললেই চলে। আবার, বাচ্চার মা যেহেতু বাচ্চা কে খাওয়াতে পারতেছেন, তাই Hypoglycemia হওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই বাকি দুটোই মাথায় রাখলেন। এবং বাচ্চার মা কে বললেন আজকেই ডাক্তার "খ" স্যারের হসপিটাল(চেম্বারে) নিয়ে যেতে। (কিন্তু বাচ্চার মা নন-মেডিকেল পার্সন হওয়ায় এবং অতিরিক্ত টেনসন করবেন বিধায়, এর চেয়ে বেশি কিছু বলেন নি)
.
যা'ই হোক, সন্ধ্যার সময় ডাক্তার "খ" স্যার কে দেখানো হল। তিনি দেখে বললেন, নিউমোনিয়া মনে হচ্ছে। এন্টিবায়োটিক(সেফ্রাডিন) দেয়া হল।কিছু টেস্ট(CBC, CRP, Blood Culture)  করতে দিয়ে তিন দিন পর দেখা করতে বলা হল।বাসায় এসে বাচ্চার বাবা কে জানানো হল ওভার ফোনে। তিনি একটু অবাক হলেও, যেহেতু পেশেন্ট উনি এখনো দেখেন নি এবং ডাক্তার "খ" স্যার ওনার সিনিয়র ও অনেক যোগ্যতা একজন শিশু ডাক্তার,, তাই বাচ্চার মা কে আর কিছু বলেন নি। তাছাড়া যাঁদের ছোট বাচ্চা আছেন তাঁরা জানেন, আপনারা হাজার হাজার বাচ্চাকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তুললেও নিজের বাচ্চার ক্ষেত্রে ট্রিটমেন্ট দিতে/অপিনিয়ন দিতেও মনে অনেক ভয় কাজ করে! তখন স্বাভাবিক ভাবেই অন্য ডাক্তারদের মতামত কেই প্রাধান্য দেয়া হয়।
এটা সব ডাক্তার পিতা-মাতার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তাই ডাক্তার "ক" স্যারও আর কিছু বলেন নি। রিপোর্টের জন্য ওয়েট করছিলেন।
.
কিন্তু এন্টিবায়োটিক শুরু করার পরও বাচ্চার সমস্যা রয়েই গেলো। সারাদিন শুধু ঘুমায় থাকে।সাথে বাচ্চার জ্বর(১০১ ডিগ্রী ফারেনহাইট) এবং কাশি।ওভার ফোনে বাচ্চার মা বাচ্চার বাবা কে আপডেট জানাতে থাকলেন।কিন্তু কোনো উন্নতি নেই দেখে একদিন পরই যেসব রিপোর্ট রেডি হয়েছে(CBC: WBC=15000, Neutrophil=42%, Lymphocyte=44% & CRP=6,, Blood culture report was pending) সেগুলো নিয়ে ডাক্তার "খ" স্যারের সাথে আর্জেন্ট দেখা করতে বললেন।বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে ওনার চেম্বারে গেলেন বাচ্চার মা। আগেরবারও আরেকজন ডাক্তার মারফত ওনাদের কে শুরু তে দেখিয়ে দেয়ার ব্যাবস্থা করা হল।তাই এবারো বাচ্চার মা ওয়েট করছিলেন।
কিন্তু কমপাউন্ডার বার বার বলছিল "স্যার একটু পরেই আসবে", এই বলে বলে কিছু সময় পার করল। পরে জানালো যে "স্যার মিটিং এ আছে"!
.
ঐ মুহূর্তে হঠাৎ করে বাচ্চা সায়ানোস্ড হয়ে যায় এবং বাচ্চার মা চিৎকারে সবাই ছুটে আসেন। আর্জেন্ট ঐ হসপিটালের ইমার্জেন্সি তে ভর্তি করানো হয়। এরপর ডাক্তার "খ" স্যার এসে বাচ্চাকে দেখে যান।তাৎক্ষণিক চেস্ট এক্স-রে তে Bilateral Patchy Opacity ছিল। উনি এন্টিবায়োটিক পরিবর্তন করে Ceftriaxone দেন এবং আশ্বস্ত করেন যে, তেমন বড় কিছু নয়, সেরে যাবে! (যদিও বাচ্চার মা বার বার বলছিল যে, "বাচ্চা শুধু ঘুমায়")
.
ওদিকে দুপুরেই বাচ্চার বাবা তাঁর অফিস ও জরুরী কাজ শেষ করে আর্জেন্ট ঢাকার  উদ্দেশ্যে রওনা দেন এবং সকাল ৫ টার দিকে ঢাকায় পৌঁছে সরাসরি ঐ হসপিটালে চলে যান।গিয়ে দেখেন বাচ্চা কে PICU তে রাখা হয়েছে।প্রথমে জাস্ট বাচ্চার বাবা হিসেবে ভেতরে প্রবেশ করেন নিজের  কোনো পরিচয় না দিয়েই। এরপর যখন কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার এসে বাচ্চার অবস্থা বর্ণনা করতে থাকলেন, তখন বাচ্চার বাবা তাঁর অফিসিয়াল কার্ড টি দিলেন এবং কার্ড দেখে ঐ মেডিকেল অফিসার একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন। এরপর বাচ্চার বাবা কে উনি বললেন, স্যার তাহলে আপনিই দেখুন। এরপর বাচ্চার বাবা বাচ্চাটার এক্সামিনেসন করে
যা যা পেলেন:
.Altered level of Consciousness
.Patient was only responding to painful stimuli
.Sign of raised ICP(Bradycardia, Jerky Respiration)
.Bilateral planter extensor
**After finding these the father of the baby thought that, it may be a case of Encephalitis with complication.. but No supportive management was given for this specific condition.

তখন বাচ্চার বাবা, ঐ মেডিকেল অফিসার কে জিজ্ঞেস করলেন: আপনারা(আপনি এবং আপনার স্যার) কী দেখলেন তাহলে?

এবং কোনো ওয়ার্ক আপ করেন নি কেনো?(যেমন: ABG, Electrolytes, RBS, CSF)

তখন ঐ মেডিকেল অফিসার জানালেন "খ" স্যার এই ব্যাপারে আমাদের এরকম কোনো ইন্সট্রাকশন দেন নি, স্যার শুধু মাত্র নিউমোনিয়া ম্যানেজম্যান্ট করার জন্য বলেছেন।
তখন ঐ মেডিকেল অফিসার তৎক্ষণাত বাচ্চার ফাইলে এই ফাইন্ডিংস গুলো নোট করে নিলেন এবং বাচ্চার বাবার কথা ওভার ফোনে ডাক্তার "খ" স্যার কে জানালেন। তখন ডাক্তার "খ" স্যার জানালেন, তাঁরা চাইলে CSF study করাতে পারে। ঐ সময় মেডিকেল অফিসার ডাক্তার "খ" স্যার কে আসতে বললে তিনি জানান, ওনাকে ঢাকার বাইরে যেতে হবে(যেহেতু সেদিন শুক্রবার ছিল), তাই আসতে পারবেন না।
.
তাই বাচ্চার বাবা তাঁর বাচ্চা কে ওখানে রাখা টা নিরাপদ মনে করলেন না এবং
পেডিহোপস হসপিটালে নিয়ে গেলেন।
পরবর্তীতে ঐ বাচ্চা কে দেখার জন্য
বিএসএমএমইউ এর পেডিয়েট্রিক নিউরোলজির চেয়ারম্যান প্রফেসর মিজানুর রহমান স্যার আসেন, ঢাকা শিশু হসপিটালের সাবেক পরিচালক প্রফেসর মনজুর আহমদ স্যার আসেন, এছাড়া পেডিয়েট্রিকস এর একজন এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর(ডা. আবু সাঈদ মুন্সি স্যার) সহ আরো বেশ কয়েকজন ডাক্তার ছিলেন।
উনাদেরও ক্লিনিক্যাল ডায়াগনোসিস ছিল: Encephalitis, কিন্তু raised ICP থাকায় এবং বাচ্চার কন্ডিশন খারাপ থাকায় CSF study করা সম্ভব হয় নি।
.
যা'ই হোক, মৃত্যু থেকে ঠেকানোর ক্ষমতা কোনো ডাক্তারেরই নেই। Encephalitis এর মর্টালিটি রেইট ৯০%, কিন্তু তাই বলে কি কোনো চেষ্টা না করে একটা পেশেন্ট কে এমনি এমনি মারা যেতে দেই আমরা??
সুতরাং বাচ্চার বাবার আপসোস টা এখানেই। সঠিক সময়ে বাচ্চাটা কে যদি একটু সময় আর গুরুত্ব দিয়ে দেখা হতো, তাহলে অন্তত চেষ্টা টুকু করা যেতো। মন কে একটু স্বান্তনা দেয়া যেতো। নিজে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ হয়ে আল্লাহর রহমতে হাজার হাজার শিশুকে চিকিৎসা দিয়ে  সুস্থ করেছেন, অথচ নিজের বাচ্চাটার ক্ষেত্রেই এমন টা ঘটলো!
.
আপনাদের জ্ঞাতার্থে বলছি, ডাক্তার "ক" স্যার ডাক্তার হিসেবে যেমন ভালো, মানুষ হিসেবে তেমন ভালো। মাস খানেক আগেই দেখেছি, এক গরীব রোগী বাচ্চা নিয়ে আসলো,, আর্জেন্ট কল পেয়ে রাত নয় টায় বাচ্চা দেখে দেয়ার পর তাঁরা পুরো ভিজিট দিতে অপারগতা জানালেন আর্থিক অস্বচ্ছলতার জন্য। তখন কমপাউন্ডার পুরো ভিজিট রাখার জন্য জোরাজুরি করতে গেলে স্যার মওকুফ করে দেন। এছাড়া স্যার কে যাঁরা ব্যাক্তিগত চেনেন, তাঁরা জানেন স্যার কতটা হাসিখুশি এবং মিশুক একজন মানুষ। (যাঁরা চেনেন,, কমেন্ট অপশনে স্যারের পরিচয় প্রকাশ না করার অনুরোধ জানাচ্ছি।স্যার এই গ্রুপেই আছেন এবং পোস্টটি পড়বেন।)
.
পুরো ঘটনাটা শুনে খুব মন খারাপ হল।
আমি তখন স্যার কে জিজ্ঞেস করলাম: স্যার, ডাক্তার "খ" স্যার তো অনেক যোগ্যতা সম্পন্ন একজন সিনিয়র স্পেশালিস্ট, এমনটা তো হওয়ার কথা নয়,, তাহলে এমনটা কেনো হল?
তখন স্যার উত্তর দিলেন: আসলে,  যেকোনো সিনিয়র স্পেশালিস্ট যখন নানান জায়গায় চেম্বার করে, অত্যধিক রোগী দেখে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন তখন তাঁর পক্ষে রোগীদের কে প্রয়োজনীয় সময় নিয়ে দেখা সম্ভব হয় না। তাছাড়া একজন
সিনিয়র স্পেশালিস্টের ৮০-৯০% রোগীই যদি সর্দি, কাশি, ডায়ারিয়ার মত কমন ডিজিজ হয় এবং তিনি দীর্ঘদিন যাবত এতেই অভ্যস্থ হয়ে পড়েন,, তখন আসলে
বাকি ১০-২০% রোগীর জন্য সেটা অনেক সময় কাল হয়ে দাঁড়ায়। কেননা এই ১০-২০% রোগী তো কোনোরকমে দেখে পার করে দেয়ার মত রোগী নয়।
.
যা বুঝার আপনারাই বুঝেছেন। উপরের কোনোটাই আমার বানানো কথা নয়, বরং স্যারের কথা।কারো দোষ/ভুল ধরতে এই পোস্ট নয়।সেটা আমার উদ্দেশ্যও নয়, আবার ডাক্তার "ক" স্যারেরও উদ্দেশ্য নয়। সুতরাং "ক" ও "খ" স্যারের নাম/প্রতিষ্ঠানের নাম নিয়ে কেউ কোনো কথা বলবেন না দয়া করে।
পোস্ট দেয়ার উদ্দেশ্য এটাই:
রোগীকে যদি আমরা একটু সময় দেই, একটু গুরুত্ব দেই, একটু মমতা আর ভালোবাসনা দেই, রোগী আমাদেরকে সম্মান দিবে। কেননা,, একসময় যে ডাক্তার সমাজ কে মানুষ ভগবানের কাছাকাছি নিয়ে যেত, এখন তাঁদের কেই মানুষ কসাইয়ের জায়গায় নামিয়ে এনেছে! :(  অনেক ক্ষেত্রে এর জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী।
.
জানি তারপরেও হয়ত কেউ কেউ ডিফেন্ড করতে আসবেন,, বলবেন:
"যে ডাক্তার সময় দিয়ে দেখে তাঁর কাছে যেতে পারেন না?  এত ব্যাস্ত ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কী দরকার? ওখানে বসে বসে ওয়েট করার কী দরকার? ইত্যাদি ইত্যাদি.."
কিন্তু তারপরেও একবার তাঁরা বলবেন না:  "নিজেদের একটু সংশধনের প্রয়োজন, আরেকটু সচেতন হওয়া প্রয়োজন.. রেফারেল সিস্টেম প্রণয়ন প্রয়োজন, অন্তত তা না পারলে নিজ নিজ জায়গা থেকে ব্যাক্তিগত ভাবে যতটা সম্ভব সচেতন/পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন.. "
.
কিন্তু তা নয়, ওনারা শুধু ডিফেন্ডই করে যাবেন। নিজেদের কে নিজেরাই "বড়" আর "ভালো" বলে বেড়াবেন। এতেই হয়ত ওনাদের মানসিক শান্তি। ওনারা শুধু এটাই চান। কারন ওনারা তো ভুক্তভুগী নয়।যেদিন ভুক্তভুগী হবেন, সেদিনই হয়ত ওনাদের একটু হুঁশ হবে।
আবারো বলছি, কারো দোষ ধরা পোস্টের উদ্দেশ্য নয়। বরং আমরা সবাই যাতে আরেকটু সচেতন হই সেটাই উদ্দেশ্য।
সুতরাং কোনো স্যার/প্রতিষ্ঠানের নাম যাতে এখানে না আসে। দয়া করে জানলেও কেউ বলবেন না। এটা শুধু আমার নয়, ঐ স্যারেরও রিকোয়েস্ট।
[সংযুক্তি: অনেকেই দেখছি একজন কনসালট্যান্ট এর শিশু হিসেবেই কেবল চিন্তা করছেন।এরকম সাধারন বাবা-মায়ের কথাও চিন্তা করুন না প্লিজ, যে/যাঁরা মেডিকেল সাইন্সের কিছুই বুঝেন না। দপোস্টের উদ্দেশ্য তো সেটাই।
আরেকটা কথা, ডাক্তার "ক" স্যার কেনো ইমেডিয়েটলি ঢাকায় যেতে পারেন নি  এর পেছনেও কারন আছে। অথচ অনেকেই ভাবছেন স্যার গুরুত্ব দেন নি, স্যার চেম্বার প্র্যাক্টিস ছেড়ে যেতে চান নি!!  এই কমেন্ট গুলো পড়ে খুব খারাপ লাগলো। বাবা হিসেবে এসব কমেন্ট পড়ে ডাক্তার "ক" স্যারেরও হয়ত মন খারাপ হবে।
কেননা, একজন বাবা/মায়ের নিকট পৃথিবীতে সন্তানের চেয়ে প্রিয় বস্তু আর কী হতে পারে?  বাবা/মা হয়ে আপনারা ওরকম ধারনাপ্রসূত কমেন্ট কীভাবে করলেন!! :(